s স্বাবলম্বী বাংলাদেশ - তবে একলা চলরে: March 2014

Mar 10, 2014

কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি
কৃষিবিদ মোঃ নিয়ামুল কবীর


কোয়েল পাখি দীর্ঘদিন ধরে জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পালন করা হচ্ছে এ পাখি। কেননা কোয়েলের মাংস একটি অন্যতম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে সর্বত্রই পরিচিত। কোয়েল পাখি সবচেয়ে ছোট আকারের পোলট্রি। আনুমানিক ৯০ দশকের গোড়ার দিকে এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। কোয়েল পালনে ভালো ফল পেতে হলে প্রথমেই এর বাচ্চা সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে। এজন্য কোয়েলের বাচ্চা তিন মাস পর্যন্ত খুবই যত্ন সহকারে বড় করতে হবে। বাংলাদেশে গরমের সময় প্রায় দুই সপ্তাহ এবং শীতের সময় তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়েল পাখিকে তাপ দিতে হয়। এতে বাচ্চা পাখির মৃত্যুহারও অনেক কম হয়। কোয়েল গৃহপালিত পাখির মধ্যে অন্যতম। কবুতরের চেয়ে একটু ছোট। এর জন্মস্থান জাপান হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের সম্পূর্ণ উপযোগী। কোয়েল পালন সহজ, দাম বেশি ও লাভজনক। কবুতরের মতো কোয়েল পাখি শখ করে কিংবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা যায়।


কোয়েল পাখি পালনের সুবিধাঃ



  • কোয়েল আকৃতিতে ছোট বলে পালন করতে জায়গা কম লাগে। খাঁচায় পালন করা যায়। একটি মুরগির পরিবর্তে ছয় থেকে সাতটি কোয়েল পাখি পালন করা যায়।

  • অল্প পুঁজি লাগে, লাভ বেশি হয়।

  • খুব দ্রুত বড় হয়। ২৫ থেকে ২৬ দিন বয়সের কোয়েল খাওয়ার উপযোগী হয় এবং ওজন হয় ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম।

  • উৎপাদন খরচ কম ও বাজারে চাহিদা এবং দাম বেশি। এক জোড়া কোয়েলের বাচ্চার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

  • কোয়েল পালন করা সহজ, সবাই পালন করতে পারেন। ছয় থেকে আট সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। একটি ডিমের ওজন আট থেকে ১২ গ্রাম।

  • কোয়েল পালন করা সহজ, সবাই পালন করতে পারেন। ছয় থেকে আট সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। একটি ডিমের ওজন আট থেকে ১২ গ্রাম।

  • কোয়েল পালন করা সহজ, সবাই পালন করতে পারেন। ছয় থেকে আট সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। একটি ডিমের ওজন আট থেকে ১২ গ্রাম।


কোয়েল পাখির জাতঃ

পৃথিবীতে কোয়েলের ১৬টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়। তার একটি জাপানিজ কোয়েল আর অন্যটি হলো বব হোয়াইট কোয়েল (মাংস উৎপাদনকারী)। জাপানি কোয়েলের অনেক জাত ও উপজাত রয়েছে। ডিম উৎপাদনকারী কোয়েল হচ্ছে ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়াল গোল্ডেন, বব হোয়াইট (আমেরিকা), হোয়াইট বেস্ট কোয়েল (ইন্ডিয়ান) ইত্যাদি। বর্তমানে এসব জাতের কোয়েল বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে।
বাসস্থানঃ

কোয়েল পাখি সাধারণত মেঝে ও খাঁচায় উভয়ভাবেই রেখে পালন করা যায়। বাচ্চা অবস্থায় প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাঁচায় অনত ৭৫ থেকে ১০০ বর্গ সেন্টিমিটার হারে জায়গার প্রয়োজন হয়। বয়স্ক প্রতিটি কোয়েলের জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সেন্টিমিটার পরিমাণ জায়গা রাখার প্রয়োজন হয়। কোয়েলের ঘরে পর্যাপ্ত আলোবাতাসের প্রয়োজন হয়। সাধারণত দৈর্ঘ্য ১২০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৬০ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার একটি খাঁচায় ৫০টি কোয়েল পালন করা যায়। প্লাস্টিকের খাঁচায় কোয়েল পালন করা সহজ। তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন বাচ্চার খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩দ্ধ৩ মিলিমিটার এবং বাড়ন ও পূর্ণবয়স্ক কোয়েলের মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫দ্ধ৫ মিলিমিটার। খাঁচা তিন থেকে চারটি স্তরে করা যেতে পারে। কোয়েলের বাসা বন্য পশুপাখির নাগালের বাইরে রাখতে হবে। খাঁচায় খাদ্য ও পানির পাত্র থাকতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুঁড়া এসব দিয়ে কোয়েলের মেঝের লিটার তৈরি করা হয়। অবস্থা দেখে কোয়েলের এ লিটার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর না হয়। প্রথমেই পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে লিটার তৈরি করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভেজা না হয়।
কোয়েলের খাদ্যঃ

কোয়েল পাখি যেসব খাদ্য থেকে পেয়ে থাকে, সেগুলো হলো_ গম ভাঙা, ভুট্টা, চালের কুঁড়া, শুকনো মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, ঝিনুকের গুঁড়া ও লবণ। চার সপ্তাহ বয়স পর্যন কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধির জন্য ২৭ ক্রড প্রোটিন এবং ২ হাজার ৮০০ কিলোক্যালোরি/কেজি শক্তি দিতে হবে।
খাদ্য সরবরাহঃ

কোয়েল পাখিকে শুষ্ক গুঁড়া/ম্যাশ ফিড প্রদান করতে হবে। চার সপ্তাহ পর্যন প্রতিটি কোয়েল দিনে চার গ্রাম করে খাদ্য খায়। পঞ্চম সপ্তাহ বয়স থেকে দৈনিক প্রতিটি কোয়েল ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাদ্য খায়। একটি কোয়েলের বছরে খাদ্য লাগে আট কেজি। এদের খাদ্য রূপানর হার ৩:১।
স্বাস্থ্যসেবাঃ

খাদ্যের সঙ্গে সব সময় ০.২৫ ভাগ ভিটামিন মিনারেল প্রিমিঙ্ জিএস এবং ডিম পাড়াকালে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিঙ্ এল দিতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ২০০ মিলিমিটার করে প্রোপিয়নিক এসিড মেশাতে হবে। গরমের সময় প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম করে স্যালাইন এবং বেশি বৃষ্টির সময়ে প্রতি লিটার পানিতে এক গ্রাম করে কসুমিঙ্ প্লাস দিতে হবে।
খাঁচায় কোয়েল পালনঃ

কোয়েল পাখির ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢোকে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি খাঁচায় ৫০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য অবশ্যই ১২০দ্ধ৬০দ্ধ৩০ সেন্টিমিটার আকারের খাঁচার প্রয়োজন হয়। খাঁচার দুই পাশে একদিকে খাবার পাত্র এবং অন্যদিকে পানির পাত্র দিতে হবে। কোয়েলের ডিম ফোটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখতে হবে।
ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনঃ

ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে হলে তিনটি স্ত্রী কোয়েলের সঙ্গে একটি পুরুষ কোয়েল প্রজননের জন্য রাখতে হবে। কোয়েল কখনও কুঁচে হয় না বলে মুরগির নিচে বা ইনকিউবেটরে কোয়েলের ডিম ফোটানো যায়। ১৬ থেকে ১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা ফোটানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য কোয়েলের ঘরে ১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।পূর্ণবয়স্ক কোয়েল থেকে বেশি ডিম পেতে হলে কোয়েলের পঞ্চম সপ্তাহ বয়সে ১২ ঘণ্টা, ষষ্ঠ সপ্তাহে ১৩ ঘণ্টা, সপ্তম সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা, অষ্টম সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা ও নবম সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা আলো দিতে হবে। তবে যতক্ষণ দিনের আলো থাকবে কৃত্রিম আলো ততক্ষণ দিতে হবে না। কৃত্রিম আলোর জন্য ১০০ বর্গফুট জায়গায় ৬০ ওয়াটের একটি বাল্ব যথেষ্ট।
কোয়েলের রোগঃ

কোয়েলের তেমন রোগবালাই হয় না। তবে কোয়েলের রক্ত আমাশয় হতে পারে। কোয়েলের রানীক্ষেত ও রক্ত আমাশয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু এরা অংঢ়বৎমবষষঁং ভঁসরমধঃড়ৎ ছত্রাকের প্রতি সংবেদনশীল। তবে প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ২০০ মিলিমিটার প্রোপিয়নিক এসিড মিশ্রিত করলে এ ছত্রাক দ্বারা খাদ্য আর সংক্রমিত হয় না।

লেখক : প্রোগ্রাম অফিসার (কৃষি), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।



কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

Mar 3, 2014

গাভীর রোগব্যাধি ও তার প্রতিকার

গাভীর রোগব্যাধি ও তার প্রতিকার


গাভীর সাধারণ রোগব্যাধি ও তার প্রতিকার সম্পর্কিত তথ্য বর্ণনা করা হয়েছে আর্টিকেলটিতে। তথ্যঃ


গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার

গৃহপালিত পশুর মধ্যে গাভী পালন কৃষিজীবি সমাজের এক দীর্ঘ কালের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমাদের দেশে গাভী পালন এক সময় কেবল গ্রামের কৃষিজীবি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দুগ্ধ চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তা গ্রামীণ কৃষিজীবীদের সীমানা চাড়িয়ে শহরের শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বহুদিন আগেই। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে এবং তা ক্রমেই সমপ্রসারিত হছে। এটা নিঃসন্দেহে শুভ লক্ষণ। ফরে উন্নত জাতের বাচুর প্রজনন এবং গাভীর যত্নের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। গাভী পালনে এর পরিচচর্যা এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট দের সচেতনতা অপরিহার্য। নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারে আপনার বাড়ি কিংবা খামারের পোষা গাভী। এসব রোগ এবং এর প্রতিকার বিষয়েই এবার আলোকপাত করা যাক।


ওলান পাকা বা Mastitis ওলান পাকা বা Mastitis


ওলান পাকা রোগঃ

নানা প্রকার রোগ-জীবাণু বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।


লক্ষণ

ক) ওলান লাল হয়ে ওঠে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভব হয়।

খ) ব্যাথার দরুণ গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ) হলুদ বর্ণ দুধের সাথে ছানার মতো টুকরা বের হয়।

পুরনো রোগে দুধ কমে যায় এমনকি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ওলান শুক্ত হয়ে যায়।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

প্রথমত আক্রান্ত পশুকে পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে। ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। বাঁচের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে টিটিসাইফন দ্বারা বাঁচের মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে।

১. ভেলুস ২০%

২. এ্যান্টিবায়েটিক

৩. ম্যাসটাইটিস টিউব ইত্যাদি।


পেট ফাঁপাঃ

সাধারণত গরহজমের জন্য গাভীর পেট ফেঁপে যায়। এছাড়া কিছু কিছু রোগের কারণেও পেট ফাঁপে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

দানাদার খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র শুকনা খড় খেতে দেওয়া যেতে পারে।

১. নিওমেট্রিল

২. কারমিনেটিভ মিঙ্চার ইত্যাদি।


ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানাঃ

অনেক রোগের দরুন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে অস্ত্রর রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত পশু দূর্বল হয়ে পড়ে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১. সকেটিল পাউডার

২. স্টিনামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি।


নিউমোনিয়াঃ

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, রাসায়নিক দ্রবাদি, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে পশুর নিউমোনিয়া হতে পারে।


লক্ষণ

ক) ঘনঘন নিঃশ্বাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।

খ) রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট হয়

গ) শুল্ক কাশি হতে পারে।

ঘ) তীব্র রোগে জ্বর হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়ে।

ঙ) বুকের মধ্যে গরগর শব্দ হয়।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। ভেলুসং ২০%

২। অ্যান্টিবায়টিক

৩। ক্লোরেটেট্রাসন

৪। টেরামাইসিন

৫। ভেটিবেনজামিন


কৃমি কৃমি


কৃমিঃ

কৃমি নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। কৃমিতে আক্রান্ত পশুকে ঠিক মতো খাবার দিলেও তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয় না। বরং দি দিন রোগা হতে থাকে।


লক্ষণ

ক) পশু দূর্বল হয়ে যায়

খ) খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়

গ) হাড্ডিসার হয়ে যায়

ঘ) সময় সময় পায়খানা পাতলা হয়

ঙ) শরীরের ওজন কমে যায়

ছ) দুগ্ধবর্তী গাভীর দুধ কমে যায়

চ) রক্তশুণ্যতায় ভোগে বলে সহজেই অন্যান্য আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।

জ) দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি পায় না।

ঝ) ফলে পশুকে রোগা ও আকারে ছোট দেখায়


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

গোবর পরীক্ষান্তে কৃমিনাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।


লক্ষণ

প্রাথমিক অবস্থায়

ক) আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না

খ) হাটতে চায় না

গ) জিহবা বের হয়ে থাকে

ঘ) মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাপতে থাকে


পরবর্তী অবস্থায় আক্রান্ত গাভী

ক) বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে

খ) মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাধের ওপর ফেলে রাখে

গ) এ অবস্থায় গাভী অনেকটা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে

ঘ) গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, উঠতে পারে না

ঙ) ধমনীর মাত্রা বেড়ে যায়

চ) অবশেষে গাভী মারা যায়


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

গাভীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দিতে পারলে দ্রুত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।


কিটোসিসঃ

দেহের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে দেহ বিষিয়ে তোলে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই কিটোসিস রোগের সৃষ্টি হয়।


লক্ষণ

ক) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়

খ) গাভীর দুধ কমে যায়

গ) দৈহিক ওজন কমে যায়

ঘ) কোষ্ঠাকাঠিন্য দেখা দেয়

ঙ) এছাড়া আক্রান্ত পশুর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়

চ) অনেক সময় গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে ঘোরে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

অপটিকরটেনল-এস ইনজেকশন।


ফুল আটকে যাওয়াঃ

বাচ্চা প্রসবের পর অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বের হয়ে আসে না। এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকতে দেখা যায়।


চিকিৎসা ও প্রতিকার

১। অকসিটোসিন

২। ইউটোসিল পেশারিস

৩। এ্যানটবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।


জলুবায়ুর প্রদাহঃ

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণূ যোনিপথ হতে জরায়ুতে পৌছে এ রোগ হতে পারে। গর্ভ ফুলের টুকরা ভেতরে থেকে গেলে পচে যায় এবং প্রদাহের কারণ ঘটায়। কামপর্বে পশুর যৌন-ক্রিয়ার সয়ও অনেক সময় জরায়ুতে রোগ জীবানূ সংক্রমিত হয়ে থাকে।


লক্ষণ

ক) জ্বর হয়

খ) দুর্গন্ধযুক্ত জলের মতো কিংবা কালচে লাল রঙের স্রাব পড়তে দেখা যায়

গ) খাদ্যে অরুচি হয়

ঘ) দুধ কমে যায়

ঙ) গাভী পাল রাখে না


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। ইউটোলিস পেরারিস

২। এ্যান্টিবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি


গর্ভপাতঃ

সাধারণত রোগ-জীবানুর কারণেই অধিকাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। এছাড়া আঘাত, বিষক্রিয়া, পক্ষাঘাত ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। ইউটোসিল পেশারিশ

২। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ইত্যাদি।


অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্বঃ

সাধারণত প্রজনন ইন্দ্রিয়সমূহের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি, হরমোন ক্ষরণের অনিয়ম, অসমতা, ওভারিতে সিস্ট ও পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়ে থাকে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

সঠিক কারণ নির্ধারণ করে হরমোন দ্বাা চিকিৎসা করলে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। যৌননালীর অসুখের দরুন বন্ধ্যাত্ব হলে ইউটোলিস পেশারিস, স্টিমাভেট ট্যাবলেট জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে। ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।


খুরো বা খুর পচাঃ

খুরের ভিতরের বা চারপাশের টিস্যু পচনশীল অবস্থাকে ফুটরট বলে।


লক্ষণ

ক) আঘাতপ্রাপ্ত টিস্যুতে পচন যুক্ত ঘা হয়

খ) আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায়

গ) পশু খুড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না

ঘ) পশুর ওজন ও দুধ কমে যায়

ঙ) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। ভেসাডিন

২। ভেসুলাং ২০% ইনজেকশন

৩। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন

৪। ক্ষতস্থান ভালভাবে পরিস্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে।


ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়ঃ

রক্ত মিশানো পাতলা পায়খানা, রক্ত শূণ্যতা ও শরীরের দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তি এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


লক্ষণ

ক) শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায়

খ) হঠাৎ করে পায়খানা শুরু হয়

গ) পায়খানার সময় ঘন ঘন কোথ দেয়

ঘ) পায়খানা খুবই দুগর্ন্ধযুক্ত

ঙ) আক্রান্ত পশু দিন দিন দূর্বল হতে থাকে

চ) মলের সাথে মিউকাস অথবা চাকা চাকা রক্ত থাকে

ছ) খেতে চায় না

জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। ভেলুসং ২০% ইনজেকশন

২। সকেটিল পাaaউডার ইত্যাদি


বেবিসিয়াসিস বা রক্ত প্রস্রাবঃ

আটালি দ্বারা এ রোগের জীবাণূ সংক্রামিত হয়।


লক্ষণ

ক) হঠাৎ জ্বর (১০৮ ডিগ্রী ফা.) হয়

খ) জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়

গ) রক্তের সঙ্গে লোহিত কাণিকা ডাঙ্গা হিমোব্লোবিন যুক্ত হবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে।

ঘ) প্রস্রাবের রঙ লাল হয়।


প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ

১। বেরিনিণ ইনজেকশন

২। শরীরের আটালিমুক্ত করার জন্য নেগুভন সপ্রে অথবা আসানটল সপ্রে দিতে হবে।


উকুন/আটালি

এরা এক প্রকার বহিঃ পরজীবী। অধিকাংশ গবাদি পশু উকুন/ আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।


চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ

১। নিওসিডল ৪০ ডবি্লউ-পি

২। আসানটল

৩। নেগুভন স্প্রে ইত্যাদি মিশিয়ে পশুর গায়ের স্প্রে করতে হবে।

তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত



গাভীর রোগব্যাধি ও তার প্রতিকার